Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার । ৩১শে জুলাই, ২০২৫ । ১৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

ববিতে ছাত্রলীগ হামলা : এক বছরেও বিচারহীনতার অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ববি প্রতিনিধি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপরে হামলাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক বছরেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের দাবি ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থীদের উপরে হামলাকারী ছাত্রলীগের দ্রুত দৃশ্যমান বিচার না করলে আন্দোলনের ডাক দিবেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপরে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। সাম্প্রতিক বেশ কিছুদিন যাবৎ ছাত্রলীগের আনাগোনা বেড়েছে ক্যাস্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ছাতিম তলা ও কেনানের দোকানের গলির ভিতরে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা ও শলাপরামর্শ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। শিক্ষার্থীদের ধারণা নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তাদের গোপন কার্যক্রম চলমান। এমনকি কিছুদিন আগে ১৫-২০ জনের একটি শোডাউনের ভিডিও তাদের গ্রুপে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ এ সংগঠনের কার্যক্রমের আশ্রয়দাতা হিসেবে নাম উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলিম সালেহির বিরুদ্ধে।

গত ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হামলায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগকর্মী শাহরিয়ার সানকে দরজা ভেঙে ছাড়িয়ে নিয়ে বিজয় মিছিল করে তার সহকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলার ঘটনায় করা মামলার ১৭ নাম্বার আসামি ছিল এই সান।

গত বছরের ২৯ জুলাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি গ্রাউন্ড ফ্লোরে মিটিংরত আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। হামলায় ১৫ জন আহত হয়ে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নেয়।

এছাড়াও ১ আগস্টে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় হয়রানি, হেনস্তা, ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা প্রদানসহ পুলিশ প্রশাসনের সাথে মিলে আন্দোলন বানচাল করা ও সমন্বয়কদের পুলিশি গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

এই সকল ঘটনার প্রমাণ থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা আরও জানান, এসব হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসের আশেপাশে ঘুরতেও দেখা যায় অনেককে। যাদের হাতে এখনো শহিদের রক্ত লেগে আছে এবং ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে তাদের এইভাবে বিচারহীনভাবে পার পেয়ে যাওয়াকে শিক্ষার্থীরা হাজার হাজার শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি বলে মনে করছেন তারা।

হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নামমাত্র দায়সারাভাবে একটি মামলা করা হলেও সেটির কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের মামলার সাক্ষী করা হয়েছে কিন্তু সাক্ষি না দেয়ায় মামলা আগাচ্ছে না। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু একটা দায়সারা মামলা করে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। তাদের দাবি এসব ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার নিজস্ব আইনে শাস্তি প্রদান করুক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদি হয়ে ২৪ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলার আসামিরা হলেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের আবুল খায়ের আরাফাত, আবিদ হাসান (গণিত বিভাগ; ২০১৫-১৬ সেশন), মাহমুদুল হাসান তমাল (আইন বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন), আল সামাদ শান্ত (ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন), খালেদ হাসান রুমি (ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন), সাইফ আহমেদ (অর্থনীতি বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন),সাব্বির হোসেন (বাংলা বিভাগ; ২০১৮-১৯ সেশন), শরীফুল ইসলাম (একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ; ২০১৮-১৯), রাকিবুল হাসান (বাংলা বিভাগ; ২০১৮-১৯)।

এছাড়াও মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের টিকলী শরিফ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অশোক আলী, আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার সান, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রসেনজিৎ।

হামলায় আহত শিক্ষার্থী মো.সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আন্দোলন চলাকালীন ২৯ জুলাই ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রক্টরিয়াল বডি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তাদের সামনেই আমাদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়, যেখানে প্রক্টরিয়াল বডি নীরব ভূমিকাই বলে দেয় ববির তৎকালীন প্রশাসন হয় ছাত্রলীগের চেয়ে দুর্বল ছিল নয়তো ছাত্রলীগকে মদদ দিচ্ছিল। হামলার পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যা আমাদের হতাশ করেছে। প্রশাসনের পটপরিবর্তন হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো লিগ্যাল অ্যাকশন নেয়নি। যা সুস্পষ্টভাবে ববি প্রশাসনের দুর্বলতার প্রমাণ অথবা বিপ্লবকে অবজ্ঞা।”

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এসব হামলার ঘটনাকে সুষ্ঠু তদন্ত করে লিগ্যাল পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ করে, তাহলে ২৪ এর জুলাইয়ের আহতদের রক্তের সাথে প্রতারণা করা হবে। ববির ছাত্র সমাজ তা মেনে নিবে না।”

হামলায় আহত আরেক শিক্ষার্থী সুজন মাহমুদ বলেন, “ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক,ববিতে এখনো ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সেই রকম কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। আমি অবনতিবিলম্বে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন বলেন, “২৯ জুলাই ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে এ বিষয় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আর থানায় যাদেরকে সাক্ষী করা হয়েছে তারাও সাক্ষী দিতে যাচ্ছে না, যার ফলে মামলাটি আগাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা যদি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায় তাহলে সেটা নিয়ে কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মামলা করা হয়েছে। আর আমি নতুন এসেছি ছাত্রলীগের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন